শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৭:৫৫ অপরাহ্ন

নিয়োগে অনিয়ম : উপাচার্য বললেন অ্যাকাডেমিক রেজাল্টে তো কতকিছু হয়

নিয়োগে অনিয়ম : উপাচার্য বললেন অ্যাকাডেমিক রেজাল্টে তো কতকিছু হয়

স্বদেশ ডেস্ক:

শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর অ্যাকাডেমিক ফলাফলকে গুরুত্ব দিতে চাচ্ছেন না রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য এম আবদুস সোবহান। তার প্রশ্ন, ‘অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট কি সবকিছু?’ আজ শুক্রবার বিকেলে আমাদের সময়ের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি এমন প্রশ্ন তোলেন।

উপাচার্য এম আবদুস সোবহান এমন সময় এই প্রশ্ন তুললেন, যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো ফলাফলধারীদের বাদ দিয়ে একের পর কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এসব নিয়োগে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির প্রমাণও পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা। তদন্ত কমিটির সেই প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়। ওই কমিটির প্রধান ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান প্রশাসনের সময় তুলামূলক অনেক কম যোগ্যতা নিয়ে শিক্ষক হওয়া অন্তত ৩৪ জনের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দিতে সুপারিশ করেছেন ইউজিসি থেকে গঠিত ওই তদন্ত কমিটির সদস্যরা। একই সঙ্গে উপাচার্য এম আবদুস সোবহান, ‍উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এম এ বারীসহ প্রশাসনের একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওঠা ২৫টি অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসির ওই তদন্ত কমিটি। দুর্নীতির মাধ্যমে তাদের ‘নৈতিকতার মারাত্মক স্খলন’ হয়েছে বলেও মনে করছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান দ্বিতীয় মেয়াদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ২০১৭ সালের ৭ মে। পরে তার সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় আগের প্রশাসনের ‘সর্বজন প্রশংসিত’ শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালা শিথিল করেন। শিক্ষক নিয়োগের ওই নীতিমালা করতে গঠিত কমিটির সভাপতি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা। সেই কমিটির সুপারিশেই শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালায় যোগ্যতা ‘তলানিতে’ নামানো হয়। আনন্দ কুমার সাহা ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলেন। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন নতুন একটি শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালা সিন্ডেকেটে অনুমোদন দেন, দুই বছরের মাথায় যা পরিবর্তন করা হয়।

নীতিমালা পরিবর্তনের পর এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৩ জনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উপাচার্য এম আবদুস সোবহানের মেয়ে ও জামাতা, তার নিজ জেলার প্রার্থী, উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়ার মেয়ে ও জামাতা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক এস এম আবু বকরের মেয়ে, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম রোস্তম আলীর ছেলে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক হাবিবুর রহমান আকনের মেয়ে, আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শিবলী ইসলামের স্ত্রী এবং বর্তমান প্রশাসনের সহকারী প্রক্টর এস এম মোখলেসুর রহমানের ভাইয়ের ছেলেসহ অনেকেই নিয়োগ পেয়েছেন। নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের থেকে আবেদন করা প্রার্থীর যোগ্যতা বেশি ছিল, কিন্তু তারা অ্যাকাডেমিক যোগ্যতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারেননি।

এ বিষয়ে ইউজিসির তদন্ত কমিটি সুপারিশ করেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫ সালের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী যে সকল প্রার্থী আবেদনের অযোগ্য ছিল এবং যে সকল বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলে যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে ৩৪ জন অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে, তা বাতিল করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেওয়া যেতে পারে।

শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যখন উপাচার্য এম আবদুস সোবহান প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ এবং ইউজিসির তদন্ত কমিটিতে যা প্রমাণিত, তখন উপাচার্য বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলছেন, ‘১৯৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী এই প্রক্রিয়া চলছে, এর কোনো ব্যত্যয় নাই। যোগ্যতার একটা ক্রাইটেরিয়া দেওয়া হয়, সেই যোগ্যতা অনুযায়ী ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল করলে তারা এপ্লাই করতে পারে। তাদের মধ্যে নির্বাচন বোর্ডই ঠিক করবে কারা যোগ্য। বাইরে থেকে বলা যাবে না কে যোগ্য। শুধুমাত্র রেজাল্টের ভিত্তিতে তারা বলতে পারে এই কথা।’

এম আবদুস সোবহান বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগ শুধুমাত্র অ্যাকাডেমিক রেজাল্টের ভিত্তিতে হয় না। নির্বাচনী বোর্ডে যেসব বিজ্ঞ লোক থাকে বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, সেগুলো তারাই দেখে।’ যদিও এই নির্বাচনী বোর্ড গঠন নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, যা এরই মধ্যে আমাদের সময়ের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

উপাচার্য বলেন, ‘এখানে যদি কেউ মনে করে থাকে যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও তাকে কেউ নেয়নি, তাহলে সে আইনের আশ্রয় নিতে পারে। এমন অভিযোগ (তদন্তের এখতিয়ার) বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নাই। এটা উনারা বলেছে ভালো, দেখা যাবে সেটা আইনে টেকে কি না।’

এম আবদুস সোবহান আরও বলেন, ‘এমন কি কেউ অভিযোগ করেছে যে, সে যোগ্য ছিল তাকে নেওয়া হয়নি, আদালতের আশ্রয় নিয়েছে? আদালতও প্রমাণ করতে পারবে না সে যোগ্য ছিল আর যাকে নিয়েছে সে অযোগ্য। তারা শুধু একটা জিনিস দেখতে পারবে, অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট। অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট কি সবকিছু? অ্যাকাডেমিক রেজাল্টে তো কতকিছু হয়।’

এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের দুটি সংগঠন উপাচার্য এম আবদুস সোবহানকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা স্বাক্ষর করে ৩০০ পৃষ্ঠার অভিযোগ সংবলিত একটি নথিপত্র প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুদক ও ইউজিসি বরাবর পাঠান। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে একটি গঠিত তদন্ত কমিটি করে ইউজিসি। ওই কমিটির প্রধান ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম। বিস্তর তদন্ত করে ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877